বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হুমায়রা ও তানভীরের দাফন সম্পন্ন : টাঙ্গাইলে বইছে শোকের মাতম
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
টাঙ্গাইল
২২ জুলাই ২০২৫ (বাসস) : ঢাকার
উত্তরায় মাইলস্টোন কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত দুই শিক্ষার্থী মেহেনাজ আক্তার হুমায়রা ও তানভীর আহমেদ
এর গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে বইছে শোকের মাতম।
আজ
মঙ্গলবার সকালে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর ও সখীপুর উপজেলার
দুই শিক্ষার্থীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
নিহত
দুই শিক্ষার্থীরা হলেন, টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার হতেয়া কেরানীপাড়ার দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহেনাজ আক্তার হুমায়রা এবং মির্জাপুর উপজেলার ওয়ার্শি ইউনিয়নের নগরভাতগ্রাম গ্রামের রুবেল মিয়ার ছেলে তানভীর আহমেদ (১৪)। সে
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
সরেজমিন
গিয়ে দেখা যায়, টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার হতেয়া কেরানীপাড়ার দেলোয়ার হোসেনের একমাত্র মেয়ে নিহত মেহেনাজ আক্তার হুমায়রা বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
মঙ্গলবার
সকাল ৯টায় সখীপুর হতেয়া কেরানীপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে হতেয়া কেরানীপাড়া সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয় মেহেনাজ আক্তার
হুমায়রাকে।
নিহত
হুমায়রার খালু নাসির সিকদার বলেন, গতরাতে রাতে ঢাকায় থেকে হুমায়রার মরদেহ
সখিপুরে
নিয়ে আসা হয়। সকাল ৯টায় জানাজা শেষে কেরানীপাড়া সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা তাকে। হুমায়রার বাবা দেলোয়ার হোসেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক। হুমায়রার জানাজায় সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল রনী সহ
রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও পেশাজীবি সংগঠন
অংশ নেন। নিহত হুমায়রার বাবা দেলোয়ার হোসেন জানান,
উত্তরায়
মাইলস্টোন কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আমার মেয়ে সহ টাঙ্গাইলের আরো
একজন শিক্ষার্থী মারা গেছে। আমার অনেক আদরের মেয়ে ছিল হুমায়রা। তাকে হারিয়ে আমি নিঃস হয়ে গেলাম। এ শোক আমি
শোইবো কি ভাবে। পুরো
দেশের মানুষ এই শোকের ঘটনায়
একাত্মতা প্রকাশ করেছে। সরকার তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে, তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর দিয়ে কেন প্রশিক্ষণ বিমান উড়ছিল?। আর কিছুই
বলতে পারছিল না সে।
অন্যদিকে
উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত নিহত ওপর শিক্ষার্থী অষ্টম শ্রেণির
তানভীরের
গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর পরিবার ও গ্রামে নেমে
এসেছে শোকের ছায়া।
সকাল
১০টায় মির্জাপুর উপজেলার আন্দিপাড়া মাদরাসা মাঠে তানভীরের
জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে আন্দিপাড়া সামাজিক কবরাস্থানে দাফন করা হয় তানভীরকে।এঘটনায় এলাকায় শোকের
ছায়া নেমে এসেছে।
টাঙ্গাইলের
মির্জাপুর উপজেলার নগর ভাতগ্রাম নয়াপাড়া গ্রামের রুবেল আহমেদ এর বড় ছেলে
তানভীর আহমেদ। পারিবারিক সুএে জানা যায়, বাবার ব্যবসার সুবাদে ঢাকায় বেড়ে উঠা তার। বাবা রুবেল মিয়ার বড় ছেলে তানভীর
ও ছোট ছেলে তাশফিক।
তানভীর অষ্টম শ্রেণির ছাত্র, ছোট ভাই তাশফিকতৃতীয়শ্রেনীতে পড়ে । দুই ভাই লেখাপড়া করেন মাইলস্টোন স্কুলে। প্রতিদিনের মত মায়ের হাতের খাবার খেয়ে স্কুলে গিয়েছিল। ছোট ভাই বেলা ১২টায় স্কুল ছুটি হলে বাসায় চলে যায়।
কোচিং পড়ার জন্য স্কুলে থেকে যায় তানভীর। তানভীর ক্লাসের ক্যাপ্টেন থাকায় দূর্ঘটনার আগ মূহুর্তে শৃঙ্খলার
দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্ত এই স্কুলে পড়তে
গিয়ে এমন ভয়াবহ এক দুর্ঘটনার শিকার
হবেন এমটি কেউ ভাবতেই পারেনি। পরিবার ও আশেপাশের মানুষদের
চোখে-মুখে শুধুই শোক আর কান্না।
তানভীর
পড়াশোনায় অত্যন্ত মনোযোগী ছিল। স্বপ্ন দেখতেন বিদেশে গিয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন আজ চিরতরে থেমে
গেছে।
এর
আগে গত রাতে তানভীরের
মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে শোকের মাতমে ভেঙে পড়েন আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয়রা। পরিবারের
দাবি এমন ঘটনায় যেন আর কোনো মায়ের
কোল খালি না করে, সে
ব্যবস্থা হোক।
নিহত
তানভীরের চাচাতো ভাই সজিব বলেন, চাচা-চাচি সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার জন্য মাইলস্টোন কলেজে ভর্তি করেছিলেন। তানভীরের ছোট ভাই তাসবির চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পরলে গ্রামে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
মির্জাপুর
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম আরিফুল ইসলাম জানান, এমন ঘটনায় আমরা সবাই মর্মাহত। এ পরিবারকে উপজেলা
প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তা প্রদান করা হবে।